ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু: ৪ লাখ টাকায় রফাদফা

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২, ২১:১৩

নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ৪ লাখ টাকায় রফাদফা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার রাতে রোজিনা আক্তার নামে ওই রোগীর টনসিল অপারেশনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে রোগীর স্বজনরা কোনো আইনি পদক্ষেপসহ ময়নাতদন্ত করতে পারবেন না বলে হাসপাতালের প্যাডে লিখিতও নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে ওই মৃত রোগীর স্বজনদের অভিযোগে বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন হাসপাতালটিতে। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বপক্ষে কোনো অনুমোদন দেখাতে না পারায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরী নগদ দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধা ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ডন চেম্বার এলাকার মেডিস্টার হসপিটাল অ্যান্ড রেনেসাঁ ল্যাবে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পাশাপাশি তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র দেখাতে না পারলে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয় হবে বলে জানানো হয়। তবে অভিযান শেষে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এদিকে গত মঙ্গলবার ওই রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের সঙ্গে ৪ লাখ টাকায় রফাদফার বিষয়টির লিখিত সেই চুক্তি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা নদী দম্ভ করে বলেছেন- ‘লিখে কিছুই করতে পারবেন না। আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ, বুঝতেই পারছেন প্রশাসনে আমার লোকের অভাব নেই। আমি নিজেই একজন সাংবাদিক’।
জানা গেছে, নগরীর মেডিস্টার হসপিটাল অ্যান্ড রেনেসাঁ ল্যাব নামের এ হাসপাতালটি চলছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। সম্প্রতি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে অভিযান চালালেও রহস্যজনক কারণে এ হাসপাতালটিতে কোনো অভিযান চালায়নি। যদিও হাসপাতাল পলিচালনার কোনো বৈধ অনুমোদন তাদের কাছে নেই। এছাড়া বৃহস্পতিবার হাসপাতালটিতে ডিউটি ডাক্তার সব সময় উপস্থিত না থাকার সত্যতা পান ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঘটনার রাতে ভুক্তভোগী পরিবারকে নগদ এক লক্ষ টাকা ও পরদিন বুধবার বেলা ১২টায় বাকি তিন লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ টাকার অর্ধেক ডা. এম এ সবুর ও বাকি অর্ধেক মেডিস্টার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করেছে বলে হাসপাতালটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান।
লেনদেন শেষে হাসপাতালটির প্যাডে লাশ ময়নাতদন্ত করাবেন না ও কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন না উল্লেখ করে মৃত রোজিনার স্বজনদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চিকিৎসক এম এ সবুরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা উপ-পরিদর্শক আমিনুর রহমান তদন্তে আসেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখেন।
তবে এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ করেনি বলে থানায় মামলা করা হয়নি। তবে রোগীর মৃত্যুকে ধামাচাপা দিতে চার লাখ টাকায় রফাদফার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে ফোন রেখে দেন।
এবিএন/আব্দুর রাজ্জাক/জসিম/এআর
এই বিভাগের আরো সংবাদ